হরিগুনানুকীর্তন 

শ্রীপাট চন্ডীদাস নানুর (বাশুলীমাতার মন্দির প্রাঙ্গন ) বীরভূম  পশ্চিমবঙ্গ

নানুর - Nanoor ( called Chandidas Nanoor)  is a village with a police station, community development block and an assembly constituency in Bolpur subdivision of Birbhum district in the Indian state of West Bengal. Nanoor is the birthplace of 14th century vaishnav poet Chandidas of Vaishnava Padavali fame.

 ভৌগোলিক -Nanoor is located at 23.70°N 87.86°E.
Nanoor is located in the south-eastern corner of the district which is an alluvial plain between Ajay River and Mayurakshi River. It has hot and dry summers, spread over March – June, followed by the monsoon from June to September. 82 per cent of the rainfall occurs during this period.
It is 47 km from Suri, 18 km from Bolpur/Santiniketan , 29 km from Ahmedpur and 7 km from kirnahar.
Nanoor block consists of the following gram panchayat: Bara Saota, Daskalgram–Kareya I, Chandidas Nanoor, Daskalgram–Kareya II, Kirnahar II, Kirnahar I, Thupsara, Uchkaran, Charkalgram, Jalundi, Nawanagar and Kadda.

যোগাযোগ ব্যবস্হা - কলকাতা  (হাওড়া,শিয়ালদাহ) থেকে ট্রেনে শান্তিনিকেতন ষ্টেশন. সেখান থেকে বাসে(কীর্ণাহারগামী অথবা কাটোয়াগামী) অথবা ট্যাক্সিতে ৪৫ মিনিটের রাস্তা.
হাওড়া থেকে বোলপুর-শান্তিনিকেতন আসার জন্য ট্রেন-
১) হাওড়া-দারভাঙ্গা প্যাসেঞ্জার (২০৯)- হাওড়ায় ছাড়ার সময় প্রতিদিন সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে, এবং বর্ধমানে ছাড়ার সময় সকাল ৯টা ৩৭মিনিট বোলপুরে পৌছাবে- সকাল ১১টায়. ভাড়া-৩৮ টাকা.
২) বিশ্বভারতি ফাস্ট প্যাসেঞ্জার (২১৫)- হাওড়ায় ছাড়ার সময় প্রতিদিন বৈকাল ৪টৈ ৪০ মিনিটে বর্ধমানে পোছাবে- সন্ধ্যা ৬টা ৪৬ মিনিটে, বোলপুরে পৌছাবে- সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে. ভাড়া- ৩৮টাকা (সেকেন্ড ক্লাসে)
৩) শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস (২৩৩৭)- হাওড়ায় প্রতিদিন ছাড়বে সকাল ১০টা ১০মনিটে, বর্ধমানে পৌছাবে- সকাল ১১টা ২৫মিনিটে, বোলপুরে পৌছাবে- দুপুর ১২টা ২৫মিনিটে. ফিরে যাবার জন্য- ট্রেন নং- ২৩৩৮, বোলপুরে ছাড়বে- দুপুর ১টা ১০ মিনিটে এবং হাওড়ায় পৌছাবে- বৈকাল ৩টে ৪০ মিনিটে. মোট দূরত্ব- ১৪৬ কিলোমিটার.
৪) দার্জিলিং মেল (২৩৪৩)- শিয়ালদহ থেকে ছাড়বে প্রতিদিন রাত্রি ১০টা ০৫মিনিটে এবং বর্ধমান পৌছাবে- রাত্রি ১১টা ৪৩মিনিটে, বোলপুরে পৌছাবে- রাত্রি ১২টা ৩৫মিনিট নাগাদ. ফেরার জন্য ট্রেন নং- ২৩৪৪ বোলপুরে ছাড়বে প্রতিদিন ভোর ৩টে ০৬ মিনিট নাগাদ এবং শিয়ালদহ পৌছাবে সকাল ৬টা নাগাদ.
৫) সরাইঘাট এক্সপ্রেস (২৩৪৫)- হাওড়ায় ছাড়বে প্রতিদিন বৈকাল ৪টে নাগাদ এবং বোলপুরে পৌছাবে- সন্ধ্যা ৬টা ০৫ মিনিট নাগাদ. ফেরার জন্য ট্রেন নং- ২৩৪৬ , বোলপুরে থেকে ছাড়বে- প্রতিদিন রাত্রি ২টো ৪৫ নাগাদ হাওড়া পৌছাবে- ভোর ৫টা ১০ নাগাদ.
৬) রামপুরহাট এক্সপ্রেস (২৩৪৭) - হাওড়ায় ছাড়ার সময় প্রতিদিন দুপুর ১২টায়, বোলপুরে পৌছাবে- দুপুর ২টো ১০নাগাদ. ফেরার জন্য ট্রেন নং- ২৩৪৮. বোলপুরে ছাড়ার সময়- প্রতিদিন বৈকাল ৫টা ৩৫মিনিটে এবং হাওড়ায় পৌছানোর সময়- রাত্রি ৮টা ১৫ মনিট নাগাদ.
৭) ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস (৩০১১)- হাওড়ায় ছাড়বে প্রতিদিন বৈকাল ৩টে ২৫ মিনিট নাগাদ. বেলপুরে পৌছাবে- সন্ধ্যা ৬টা ২৫মিনিট নাগাদ. ফেরার জন্য ট্রেন নং- ৩০১২. বোলপুরে ছাড়ার সময়- সকাল ৮টা ১৫মিনিট নাগাদ. এবং হাওড়ায় পৌছানোর সময়- সকাল ১১টা ২৫ মিনিট.
৮) গণদেবতা এক্সপ্রেস (৩০১৭)- হাওড়ায় ছাড়ার সময় প্রতিদিন সকাল ৬টা ০৫ মিনিট এবং বোলপুরে পৌছানোর সময়- সকাল ৮টা ৫০ মিনিট নাগাদ. ফেরার জন্য- ট্রেন নং- ৩০১৮. বোলপুরে ছাড়ার সময়- সন্ধ্যা ৬টা ৩০মিনিট নাগাদ. এবং হাওড়ায় পৌছানোর সময়- রাত্রি ৯টা ৪৫মিনিট নাগাদ.
৯) হাওড়া- গয়া এক্সপ্রেস (৩০২৩) - হাওড়ায় ছাড়ার সময়- প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে এবং বোলপুরে পৌছানোর সময়- রাত্রি ১০টা ৪০মিনিটে. ফেরার জন্য ট্রেন নং- ৩০২৪. বোলপুরে ছাড়ার সময় রাত্রি ১২টা ০৪মিনিট এবং হাওড়ায় পৌছানোর সময়- ভোর ৩টে ৪৫মিনিটে.
১০) হাওড়া জামালপুর এক্সপ্রেস (৩০৭১) - হাওড়ায় ছাড়ার সময়- প্রতিদিন রাত্রি ৯টা ৪৫মিনিটে এবং বোলপুরে পৌছানোর সময়- রাত্রি ১১টা ৫৫মিনিটে. ফেরার জন্য ট্রেন নং- ৩০৭২. বোলপুরে ছাড়ার সময়- প্রতিদিন রাত্রি ১টা ১৬ মিনিট এবং হাওড়ায় পৌছানোর সময়- ভোর ৪টে ৪০মিনিট.

১১) কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (৫৬৫৭)- শিয়ালদহ থেকে ছাড়ার সময় প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪৫মিনিটে এবং বোলপুরে পৌছাবে- সকাল ৯টা ৩৫মিনিটে. ফেরার জন্য ট্রেন নং-৫৬৫৮ বোলপুরে ছাড়ার সময়- প্রতিদিন বৈকাল ৪টে ১৫মিনিটে এবং শিয়ালদহে পৌছানোর সময়- সন্ধ্যা ৭টা ২৫মিনিট.
বোলপুর হইতে নানুর আসার প্রয়োজনীয় কিছু বাসের নাম- ১)মহামায়া( ছাড়ে ভোড় ৪.২০তে নানুর পৌছয় সকাল ৫টায়) ২) কৃষ্ণনগর (ছাড়ে সকাল ৫.২০মি. নানুর পৌছয় সকাল ৬টায়) ৩)বহরমপুর (ছাড়ে ৫.৪০ নানুর পৌছয় সকাল ৬.২০তে) ৪)মা কংকালী(৬টায় ছাড়ে নানুর পৌছয় ৭টায়)
এছাড়া কতকগুলি বাসের নাম হল- শ্রীমা(চাকটা), ডায়ানেমিক(দূর্গাপুর-জঙ্গীপুর), বসন্ত(দূর্গাপুর- উদ্ধাহরণপুর), আদ্যাশক্তি(বোলপুর বহরমপুর),জয় মা ডাঙালী(উদ্ধাহরণপুর)ইত্যাদি. 
বি:দ্র:-সমস্ত বাসই জামবুনী বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ে

বর্তমান নির্দশন - চন্ডীদাসের ঢিবি - নানুর গ্রামের মধ্যস্হলে চন্ডীদাসের স্মৃতি বিজড়িত যে ঢিবিটি রয়েছে প্রায় ছয়শো বছর আগে সাঙ্গ-পাঙ্গ সহ চন্ডীদাস তার নিচে চাপা পড়েছিলেন .আজও এই ঢিবিটি দেখতে একটি ধ্বংসস্ত্তপের মত. দেবী বিশালাক্ষী ও ঢিবির নিচে ছিলেন, পরবর্তীকালে নানুরের লোক তাঁকে উদ্ধার করেন. বিশালক্ষী পুনরুদ্ধারে পরবর্তীকালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারতীয় প্রত্নতত্ব বিভাগ কর্তৃক ঐ ঢিবিটির বিভিন্ন অংশ খনন করা হয়.
রামীর কাপড় কাচার পাটা- দ্যাঁওতার পশ্চিম পাড়ে রক্ষাকালী মন্দিরের পাশে রামীর কাপড় কাচা পাটাটি আজও দেখতে পাওয়া যায়. পাটাটি রোদ, বৃষ্টি মাথায় করে দ্যাঁওতার পাড়ে দীর্ঘদিন অবহেলিত অবস্হায় পড়েছিল. নানুর নিবাসী পরলোকগত অনাদিকিঙ্কর রায় এই কাষ্টখন্ডটি গুরুত্ব উপলব্ধি করে রক্ষাকালী মন্দিরের দেওয়ালের সঙ্গে পাটাটি গেঁথে রাখেন. বর্তমানে পাটাটি আর কাষ্টখন্ড নাই, পাথরে পরিনত হয়েছে. নানুরে আগত দর্শনার্থীদের কাছে এই বস্তুটি এখন অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে.
গেষ্টহাউস -  বর্তমানে  আরকিওলজিক্যাল  অফ ইন্ডিয়ার সহায়তায় রক্ষাকালী মন্দির প্রাঙ্গনে একটি গেষ্টহাউস  নির্মিত হতে চলেছে 
নানুরের হসপিটাল- নানুরে একটি প্রাথমিক স্বাস্হ্য কেন্দ্র আছে যেটি বর্তমানে রুরাল হসপিটালে পরিনত হয়েছে . ৭০ টি শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে ৩জন অভিঞ্জ ডাক্তার থাকেন.পার্শবর্তী গ্রামের রোগীরা এথানে সেবা পেয়ে থাকেন.

নানুরের চন্ডীদাস - বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদকর্তা হিসাবে চন্ডীদাস নাম সর্বজন বিদিত. কিন্তূ চন্ডীদাস পদাবলীর মধ্যে প্রাপ্ত বিভিন্ন ভনিতাযুক্ত পদ থেকে আমরা কিছুতেই ঠিক করে উঠতে পারছি না যে, সে যুগে চন্ডীদাস নামধারী ব্যক্তি একজন না একাধিক জন ছিলেন. চন্ডীদাস তাঁর পদাবলীর মধ্যে যে পরিমান রাধাকৃষ্ণের লীলাকীর্তন করেছেন তার এক পয়সা অংশ কোথাও নিজের গুনকীর্তন করেন নাই . তাই  চন্ডীদাস সমস্যা আজ ও রহস্যবৃত আছে . চন্ডীদাসের পদাবলীতে প্রধানত - চার রকম ভনিতাযুক্ত পদ পাওয়া যায় . দ্বিজচন্ডীদাস, চন্ডীদাস, দীনচন্ডীদাস, বড়ুচন্ডীদাস. এই সকল বিভিন্ন পদের ভাব ও ভাষা দেখে মনে হতে পারে যে, সমস্ত ভনিতাযুক্ত পদই একজন কবির রচিত. সমস্ত পদের বিষয় বস্তু একই. রাধাকৃষ্ণের লীলাকীর্তনই ছিল পদকর্তার মুখ্য উদ্দেশ্য. এমনও হতে পারে যে বৈষ্ণব কবি চন্ডীদাস সে বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই. আর বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বই পত্র পড়ে বলা যেতে পারে যে পদাবলী রচয়িতা চন্ডীদাসই এই নানুরের চন্ডীদাস. তাঁর পিতার নাম ভবানী ঠাকুর ও মাতার নাম ভৈরবী ঠাকরুণ. অবশ্য এ বিষয়ের সতত্যা সম্বন্ধে সাহিত্যিকদের মধ্যে অনেক মতভেদ দেখা যায়.

 উনবিংশ শতকে চন্ডীদাসের একক কবি ব্যক্তিত্ব কোন সংশয় সৃষ্ট করেনি, কিন্তু বিংশ শতকে চন্ডীদাসের পদ যত আবিষ্কৃত হতে লাগল, সন্দেহ ও সংশয় ততই বৃদ্ধি পেল. চন্ডীদাস গবেষণা ক্রমশ জটিলতর হয়ে পড়ল, এ প্রসঙ্গে আচার্য্য দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর বঙ্গভাষা ও সাহিত্য গ্রন্হে বলেছেন- আমার নিকট চন্ডীদাস এক ভিন্ন অভিন্ন নহে. অপরিণত বয়সের চাপল্যে চন্ডীদাস শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের ন্যায় অতি অশ্লীল কাব্য রচনা করেন. পরে শিল্পী স্বভাবের ক্রম বিবর্তনের ফলে পরিণত বয়সে তিনি অপূর্ব প্রেম ভাব সমৃদ্ধ পদ সাহিত্য রচনা করেন. শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের আবিস্কর্তা বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ দীনেশ চন্দ্রের এই মতকেই সমর্থন করেন.

দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় "বৈষ্ণব কবি প্রসঙ্গে" গ্রন্হে চন্ডীদাস সমস্যা আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন- হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও সতীশচন্দ্র রায় চন্ডীদাস সমস্যার সমাধানে তিনজন চন্ডীদাসকে স্বীকার করেছেন. চৈতন্য পূর্ববর্তী দুজন চন্ডীদাসের একজন শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন রচয়িতা বড়ু চন্ডীদাস ও অন্যজন স্বল্প সংখ্যক শ্রেষ্ঠ পদরচয়িতার প্রথম শ্রেণীর কবি পদাবলির চন্ডীদাস. চন্ডীদাসের নামে প্রচলিত পদরচয়িতা চৈতন্য পরবর্তী যুগের দীন চন্ডীদাস. হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ও সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতেও তিনজন চন্ডীদাস বর্তমান ছিলেন. খগেন্দ্রনাথ মিত্রের মতে চন্ডীদাস মোট দুজন. একজন প্রাক চৈতন্য যুগের উত্কৃষ্ঠ পদ রচয়িতা দ্বিজচন্ডীদাস এবং অন্যজন চৈতন্য পরবর্তীকালের নিকৃষ্ট প্রতিভা সম্পন্ন কবি দীনচন্ডীদাস. বড়ুর অস্বিত্ব তিনি অস্বীকার করেন. বিমানবাহিনী মজুমদারের মতে প্রাক চৈতন্য যুগের উত্কৃষ্ট পদ রচয়িতা পদাবলীর চন্ডীদাসের পদেই চৈতন্যদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এর মতে চন্ডীদাস চারজন. চৈতন্য পূর্ববর্তী বড়ুচন্ডীদাস এবং পদাবলীর চন্ডীদাস যাঁর পদ চৈতন্যদেব আস্বাদন করতেন, এছাড়া ছিলেন সহজিয়া চন্ডীদাস ও দীন চন্ডীদাস চৈতন্য পরবর্তী কালের পদ ও পালগানের রচয়িতা.

রামরঞ্জন দাস রচিত পশ্চিমবঙ্গের পুরাকীর্তি গ্রন্হে উল্লেখ আছে- প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে তিনজন চন্ডীদাসের নাম পাওয়া যায় যেমন- দ্বিজচন্ডীদাস, বড়ুচন্ডীদাস, এবং দীনচন্ডীদাস. তবে দ্বিজচন্ডীদাস যে এক সময়ে নানুরে বসবাস করতেন, সে বিষয়ে পন্ডিতেরা একমত, কিন্তু অপর দুজন চন্ডীদাস সম্বন্ধে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না.

চন্ডীদাস সমস্যা আলোচনা প্রসঙ্গে গোপাল হালদার 'বাংলা সাহিত্যের রুপরেথা' গ্রন্হের প্রথম খন্ডে লিখেছেন- মধ্যযুগের বাঙালীর প্রাণ যে কাব্যমার্গে আপনাকে উত্সারিত করে দিয়েছে তা হল বৈষ্ণব পদাবলী. সেই পদাবলীর পদকারদের মধ্যে চন্ডীদাস ও বিদ্যাপতি প্রাচীনতম ও প্রধানতম বলে পূজিত. এদের মধ্যে নানা কারনেই বলা যেতে পারে চন্ডীদাস ছিলেন শ্রেষ্ঠ. তাঁর নামে প্রায় বারশ পদ প্রচলিত. আর সে সব পদের মধ্যে কয়েকটি পদ আছে যা বাঙালীর চিত্তের পরম প্রকাশ , বিশ্ব সাহিত্য অপাঙ্ ত্তেয় . কিন্তু এমন অনেক পদ আছে যা নিতান্তই মামুলী. কোনো শ্রেষ্ঠ কবির লেখনীর অযোগ্য. তাছাড়া চন্ডীদাসের নামে প্রচলিত কোন কোন পদের ভনিতায় অন্য পদকর্তার ও নাম পাওয়া যায়. আর চন্ডীদাসের ও ভনিতা পাওয়া যায়.আদি চন্ডীদাস ,কবি চন্ডীদাস, দীনচন্ডীদাস প্রভৃতি নানা নামে. স্পষ্টই সন্দেহ হয় একাধিক পদকর্তা চন্ডীদাস নামে আপনাকে পরিচিত করে গিয়েছেন. এই হল চন্ডীদাস সমস্যা. শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন আবিষ্কারের পর এই প্রশ্ন আরও তীক্ষ্ম হয়ে উঠল. কারণ এ কবির ভনিতা আরও নতুন. তিনি বাশুলী ভক্ত বড়ু চন্ডীদাস. আর বৈষ্ণব পদাবলীর বারশো পদের মধ্যে মাএ দুটি, বা ঐরুপ আরো দু-একটি পদ আছে, যার মুল শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের পদ সমুহের সঙ্গে পদাবলীর চন্ডীদাসের পদ সমুহের সম্পর্কের চিহ্ণ মাএ নেই. তাই স্বভাবতই মনে হয় চৈতন্যদেব যে চন্ডীদাসের পদ সংগীতে পরম আনন্দ লাভ করতেন আসলে তিনি আর কেউ নন, শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের কবি বড়ুচন্ডীদাস, আর সম্ভবত তিনিই আদি চন্ডীদাস.

এই ভাবে মহাকবি চন্ডীদাসকে নিয়ে যখন তর্কের ঝড় প্রবল বয়ে চলেছে সেই সময়েই নানুরে এসে প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে বিচার করে অধ্যাপক বিনয় ঘোষ মহাশয় বলেন, বাংলার সর্বজন প্রিয় যিনি গীতি কবি ও পদকর্তা চন্ডীদাস, তিনি দ্বিজই হন, আর যাহই হন, তিনি নানুরের চন্ডীদাস. বাংলাসাহিত্যে বৈষ্ণব কাব্যের ধারা আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন- এই চন্ডীদাস যিনি তন্ত্রযানী সহজ সাধক হয়েও প্রেমের সুরে বাংলার জাগরণের গান গেয়েছেন, তিনি বীরভূমের নানুরের অধিবাসী হওয়াই সম্ভব. 

বসুমতী সাহিত্য মন্দির প্রকাশিত মহাকবি চন্ডীদাস পদাবলী গ্রন্হের ভূমিকায় দীনেন্দ্রকুমার রায় মন্তব্য করেছেন যে চন্ডীদাসের ভনিতাযুক্ত পদাবলীতেই যখন একাধিক চন্ডীদাসের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়, এবং রচনা প্রণালীও যখন স্বতন্ত্র তখন নানুরের চন্ডীদাসকেই অমর পদকর্তা মহাকবি চন্ডীদাস বলে স্বীকার করতে আপত্তির কোন কারণ থাকতে পারে না. তিনি আরও বলেন যে সেই চন্ডীদাসই নানুরের মহাকবি চন্ডীদাস, যাঁর পদ মাধুর্যে সারা বাংলা মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছিল, বঙ্গ- সাহিত্যাকাশের যিনি শুকতারা, বিদ্যাপতি যখন স্বরচিত পদাবলীর লালিত্যে, মধুরতায় ও ঝংকারে বঙ্গ বিহারকে বিমোহিত করেছিলেন সেই সময় যে মহাকবির সহিত সুরধনী তীরে তাঁর সাক্ষাত হয়ছিল, যিনি বাংলা ভাষাকে দিব্য , শ্রীসম্পন্ন ও গৌরবান্বিত করেছেন. রজকিনীর প্রেম যাঁর নিকট নিকষিত হেম এবং যার জন্য তিনি সহস্রপ্রকার নির্যাতন, নিগ্রহ, বিদ্রুপ, ঘৃণা, কটুক্তি, অবনত মস্তকে সহ্য করেছিলেন.

'চন্ডীদাস কয়জন'? - এই আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বস্তুত যে দিক হইতেই দেখা যাউক, ইহা সুস্পষ্ট প্রতিপন্ন হইয়াছে যে একাধিক ব্যাক্তি নানুরের মহাকবি চন্ডীদাস নামের টিকিট কপালে আঁটিয়া খ্যাতি লাভের জন্য সাহিত্যের দরবারে প্রবেশ করিয়াছেন. তাহাতে নানুরের মহাকবির মহিমা ক্ষুন্ন হয় নাই বটে, কিন্তু সেই সকল নকলনবিশের মেকি পদগুলি বাছিয়া ফেলিয়া মহাকবির রচিত পদগুলিকে ভেজালহীন ভাবে একত্র গ্রথিত করা অত্যন্ত দুরূহ কার্য্য?" 

মহাকবি চন্ডীদাসের পদাবলীতে--

নানুরের মাঠে গ্রামের নিকটে

বাসুলী আছয়ে মহা

বাশুলী আদেশে কহে চন্ডীদাসে

সুখ সে পাইবে তথা.

প্রভৃতি পদে নানুরের নাম উল্লেখ দেখে মনে হতে পারে পদাবলী রচয়িতা চন্ডীদাস যিনিই হোন না কেন, তিনিই নানুরের চন্ডীদাস. স্হানীয় অধিবাসীদের মতে যদি প্রচলিত কাহিনীকে ভিত্তি করে ইতিহাস গড়ে ওঠে এবং তা যদি সাধারন শিক্ষিতের অনুমোদন যোগ্য হয় তবে বীরভূমের নানুরকে বাদ দিয়ে চন্ডীদাসের অস্বিত্ব চিন্তা করা যায় না. তাঁর আত্মীয় স্বজনের মধ্যে স্ত্রীর কোন উল্লেখ আমরা কোথাও দেখতে পাই না. পিতামাতার নাম নিয়ে ও মতভেদ আছে. কোন কোন গ্রন্হে নকুল হাজরা নামে চন্ডীদাসের এক ভাইয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়. কিন্তু তিনি কোন সম্পর্কে তাঁর ভাই ছিলেন এবং কি হিসাবে তাঁর কি গুরুত্বপূ্র্ন ভূমিকা ছিল তা জানা যায় না. বিশালক্ষী দেবী গ্রাম্য দেবী হিসাবে জমিদারের ব্যবস্হায় গ্রাম বাসীগণ কর্তক পূজিত হতেন. চন্ডীদাসের বাবাকে পূজারি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল. পিতার মৃত্যুর পর বড় ছেলে হিসাবে চন্ডীদাসকে পিতার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়েছিল এবং বিশালক্ষী মাতার পূজার দায়িত্ব চন্ডীদাসের উপর পুরোপুরি অর্পিত হইল. এর কিছুকাল পরেই সাধনসঙ্গিনী হিসাবে চন্ডীদাসের জীবনে রামি বা রামমনির আর্বিভাব ঘটে.