কীর্তন কমিটিসাধক কবি দ্বিজ চন্ডীদাস সাধন-পাটে মাতা বাশুলীর আশীর্বাদে যে উত্সবের শুরু আজতা ভাবের গভীরতায় ও বৈষ্ণব-ভক্তের মহামিলনে বাংলার রসিক মানুষের এক অতি পরিচিত উত্সব / উত্সবের বীজ পোঁতা হয়েছিল একটি ছোট্ট হরিবাসর উত্সব দিয়ে.                                                    নিত্যানন্দ ত্রয়োদশীতে মহাসমারোহে বিশালক্ষী দেবীর মন্দির প্রাঙ্গনে হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠান অনুষ্টিত হয়.পশ্চিমবাংলার বিখ্যাত কীর্তনীয়ারা এখানে কীর্তনগান পরিবেশন করেন.চার দিন ধরে চলা এই উত্সবে দুই বেলা প্রসাদের ব্যাবস্হা থাকে. দূর নিকটের অগনিত মাতৃমন্ডলীর অকৃপন দানে এই উত্সবের ব্যয় ভার নির্বাহ করা হয়ে থাকে.

ভক্তদের যে কোনো দান সাদরে গৃহীত হইবে

দান দেবার উপায়- ভক্তদের যে কোন দান আমরা সাদরে গ্রহন করে থাকি.তা সে আর্থিক সাহায্যই হোক না কেন. অনেকে ক্ষেতের সবজিও ভিক্ষা হিসাবে দান করেন. 

ভক্তরা প্রয়োজনে নিম্নবর্ণত ঠিকানায় মানি অর্ডার প্রেরন করতে পারেন-

ঠিকানা- হরিগুনানুকীর্তন মহামহোত্সব কমিটি প্রযত্নে- গোপীনাথ মুস্থৌফী(কেষ্ট), গ্রাম-চন্ডীদাস নানুর. থানা- চন্ডীদাস নানুর, পো- চন্ডীদাস নানুর, জেলা - বীরভূম, সূচক- ৭৩১৩০১ প.ব.

কমিটির কিছু প্রয়োজনীয় ফোন নং- ১) শুভেন্দু নাগ- ৯৪৩৪৬৩২৮৯০ (২) বাসুদেব ঘোষ- ৯৪৩৪৭০৫১২১ (৩) নন্দ বটব্যাল- ৯৪৭৪৬১২৭১৯ (৪) বিশ্বম্ভর লাহা- ৯৪৭৫৯৮৬৫৫০ (৫) কেষ্ট মুস্তোফী- ০৩৪৬৩-২৪১০১৮

কীর্তনের ইতিবৃত্ত - শ্রীচৈতন্য প্রথম জীবনে পদগানের যে রীতির প্রচলন করেছিলেন তা ঠিক আধুনিক পদাবলী কীর্তনের মত ছিল না. সে রীতি ছিল জয়দেবের গীতগোবিন্দ ও চর্যাগানের ধারাবাহিক কীর্তন গীতরীতি. শ্রীচৈতন্যের জীবনীগ্রন্হে দেখা যায় যে তিনি পাঁচ দশজন মিলে হরিসংকীর্তনের আয়োজন করতেন. সংকীর্তনে দুচার ছত্রের পদের গানে ও তালে শ্রীচৈতন্যের নিজস্ব রীতি যতটুকু ছিল তা অবশ্যই পদাবলীকীর্তনে সঞ্চারিত হয়েছিল.নবদ্বীপ ও পুরীধামে মুকুন্দ দত্ত ও স্বরূপ দামোদর প্রভৃতি সুকন্ঠ ও বিদগ্ধ গায়কের এবং বক্রেশ্বর পন্ডিতের মত কুশলী নর্তকের যে নৃত্য ও গীতি পদ্ধতি শ্রীচৈতন্যকে আনন্দ দিয়েছিল, তাও তার তিরোধানের আগেই পদকীর্তন রীতিকে যে সমৃদ্ধ করেছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই. এছাড়া কীর্তনের বিবর্তনের প্রথম দিকে ভাগবত পাঠপদ্ধতির ও কিছুটা প্রভাব পড়েছিল. রঘুনাথ ভট্টের ভাগবত পাঠের প্রসঙ্গে এই সুরময় পাঠপদ্ধতির ইঙ্গিত শ্রীচৈতন্যের চরিতামৃত গ্রন্হে পাই. সেথানে আছে-

  "এক শ্লোক পড়িতে ফিরায় তিন চার রাগ."

               শ্রীচৈতন্যের জীবন ইতিহাস থেকে জানা যায় যে শ্রীচৈতন্য জয়দেব বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাসের পদ-এর কীর্তন গানে দিনরাত একেবারে বিভোর হয়ে থাকতেন. তাই কীর্তন গানের সঙ্গে শ্রীচৈতন্যের নাম এমন অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে. মনে রাখতে হবে যে, শ্রীচৈতন্যই প্রথম আমাদের উচ্চৈশ্বরে হরিনাম সংকীর্তনের নির্দেশ দিয়েছিলেন. শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব কালে হিন্দু ধর্মের চর্চার ক্ষেত্রে বিধর্মী শাসকের প্রবল বাধা ছিল. হিন্দুরা এর আগে কোনদিনই মিলিতভাবে ধর্মসাধনা করেনি. হিন্দুরা ধর্মসাধনার ক্ষেত্রে ছিল মূলত বন, মন, ও গৃহকোণ. কিন্তু ইসলামধর্ম সমষ্টিগতভাবে পালন করা হয়. সম্ববত এরই প্রভাবে হিন্দুদের মিলিত ধর্মসাধনার সূচনা করতেই মহাপ্রভু কীর্তনের আয়োজন করেছিলেন. তিনি বৈঠকী কীর্তনের চেয়েও নগর কীর্তনের উপর বেশী গুরুত্ব দিতেন, কারণ নগর কীর্তন ভ্রাম্যমান কীর্তন তাতে সাধারণ মানুষের মিলন সহজ হয়.এছাড়া একত্র এতগুলি মানুষের উচ্চৈস্বরে সংকীর্তনের সূত্রে একটা ঐক্যবোধ সৃষ্টি হোত. এই কারনেই কীর্তন ক্রমশ জনপ্রীয়তা লাভ করে. শ্রীবাসের গৃহে শ্রীচৈতন্যের অনুপ্রেননায় কীর্তন গানের আসর বসত নবদ্বীপধামে. মহাপ্রভু এই আসরে সহজ সরলভাবে ঈশ্বরের নামগোত্র প্রচারের কথা বলতেন. বলতেন যে কলিযুগে নামকীর্তনের চেয়ে বড় ধর্ম আর নেই. কারন যাগযঞ্জ হোম ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক ধর্ম পালন কীর্তনের মত সহজ ছিল না. এমনকি সেকাল প্রচলিত তান্ত্রিক ক্রিয়াকর্মও ছিল জটিল ও ব্যভিচারে লিপ্ত. তাই হিন্দু সমাজের অন্তর্গত বর্ণবিভেদ সম্প্রদায়ভেদ ও উচ্চ নীচ জাতিভেদ বহুধাবিচ্ছিন্ন বাঙালী জীবনকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যই একই সঙ্গে নাচ ও গান মিলে ঈশ্বরের নামগানের প্রচার ক্রমশ এমন জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল.

  শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের আগে বঙ্গদেশের সামাজিক ও ধর্মায় জীবনে বিচিত্র অনাচার ও দুর্নীতির মূলে ছিল স্বৈরাচারী বিধর্মী ও বিদেশী রাজশক্তি, অন্যদিকে ছিল উচ্চবর্ণের হিন্দুসমাজ. এই অবস্হায় সমাজের চরম বিপর্যয়ের সময় মরণাপন্ন জাতিকে বাঁচাবার জন্য শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব ঘটেছিল. তিনি নিমজ্জন দশা থেকে জাতিকে উদ্ধার করলেন. তাঁর এই ধর্মান্দোলনকে প্রগতিশীল যুব আন্দোলন বললেই ভূল হবে না. তিনি ভক্তির ভাবাবেগে গানে গানে সমাজের অচলায়তন টাকে ভাঙতে চেয়েছিলেন. তাঁর দ্বারাই অদ্বৈতচার্যের মত ঞ্জানবৃদ্ধের মনে তারুন্যের সঞ্চার হয়েছিলয়. অদ্বৈত আচার্য শ্রীচৈতন্যকে স্বয়ং কৃষ্ণরুপে দেখে তাঁর চরণে তুলসী পত্রের অঞ্জলী দিয়ে বলেছিলেন - "শ্রীকৃষ্ণায় নম:" . তাই শ্রীচৈতন্যকে ঘিরে ভক্তগন এমনভাবে রাস্তায় নেমে নামকীর্তন ও নগরকীর্তন করেছিলেন. তিনি নিজে নেচে গেয়ে সকলকে নাচালেন ও গাওলেন. বললেন যে বৈষ্ণব প্রেমধর্মের সূত্রেই সাধারণ মানুষের ধর্মাচরণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে. ধর্মস্হানে প্রবেশের অধিকার নিয়ে জাতি বর্ণভেদের কোন প্রশ্ন থাকবে না. তার এই কীর্তন গানের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশুদ্ধ উদার মানবিকতার মহান বাণী প্রচার. তিনি যেন নানুরের কবি চন্ডীদাসের মানবতার মহান বাণীকেই গানে গানে প্রচার করে বলেছেন যে মনুষ্যত্বেই মানুষের যথার্থ পরিচয়. বললেন--

"শুনহ মানুষ ভাই                       সবার উপরে মানুষ সত্য

তাহার উপরে নাই ."   তিনি ঘোষনা করলেন যে, ঈশ্বর মানুষের কাছের মানুষ, প্রিয়মানুষ, বন্ধু, পুত্র, প্রেমিক রুপে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন. মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই. হরিভক্তি পরায়ণ চন্ডালও হরিভক্তিহীন ব্রাম্ভণের চেয়ে শ্রেষ্ঠ. গণ আন্দোলনের গান নায়ক শ্রীচৈতন্যের গনধর্মের শ্লোগান-কীর্তনকে তাই হুসেন শাহ স্বীকার করে নিলেন. হুসেন শাহ বললেন-

"সব লোক লই মুখে করুণ কীর্তন.

বিরলে থাকুন কিম্বা যেথা লয় মন..

কাজী বা কোটাল কিবা হউ কোন জন.

কিছু বলিলেই তার লইব জীবন."

ফলে হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতি উদ্ধার পেল. এই কারণেই কীর্তন গানের গুরত্ব এত বেশী.